বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় মামলা, চালক ও মালিক পলাতক, এখোনও নিখোঁজ- ২

তুষার আহাম্মেদ – মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলা সংলগ্ন পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে হতাহতের ঘটনায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক মো. আলামিন মামলা দায়ের করেছেন। বাদি হয়ে এ ঘটনায় বাল্কহেডের মালিক ও চালক সহ ৫ জনকে আসামী করে টঙ্গীবাড়ি থানায় মামলা করেছেন। ঘটনায় বাল্কহেডের ৩ শ্রমিকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করলে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ.ম হাবিবুর রহমান আসামীদের পক্ষে টঙ্গীবাড়ি আমলী আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান শুনানী শেষে ৩ আসামীর জামিন মঞ্জু করেন। আটককৃতরা হলেন, বাল্কহেডের ইঞ্জিন মিস্ত্রি মতলব উত্তর থানার দশআনি এলাকার মৃত আবুল হাসেম মিয়াজির ছেলে হানিফ মিয়াজি (৫৫), বাল্কহেডের বাবুর্চি একই উপজেলার সাঙ্গীভাঙ্গা এলাকার নবির হোসেন সরকারের ছেলে রাকিব হাসান (২০), বাল্কহেডের লস্কর শেখ সাদি বেপারীর ছেলে আবু হানিফ (২১)। মামলার ২ আসামী বাল্কহেডের মালিক চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার দক্ষিন দশানী গ্রামের তাইজুদ্দিন মিয়াজীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৩৮) ও সুকানী রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মহাজন পাড়া এলাকার শাহজালালের ছেলে বেল্লাল হোসেন (৩৫) এখনও পলাতক রয়েছে। এদিকে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলো সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) ও লাশ উদ্ধার হওয়া নিহত শিফার খালাতো ভাই রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩৫) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। এর আগে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাল্কহেডের ভেতরে ইঞ্জিনের পাশে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ৩ শ্রমিককে আটক করে নৌপুলিশ। মুন্সীগঞ্জ সদরের চর আবদুল্লাহ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. হাসনাত জামান সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বলেন, নিখোঁজ ২ জনের সন্ধানে আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে ও আশে পাশের নদীতে নিখোঁজদের সন্ধান করছি এবং বিভিন্ন স্থানে ম্যাসেজ দিয়েছি। আমাদের ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, ঘাতক বাল্কহেডের ৩ শ্রমিককে আটক করে টঙ্গীবাড়ি থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ৩ শ্রমিক জনরোষ থেকে বাঁচতে জব্দকৃত বাল্কহেডের ইঞ্জিন কক্ষে তেল রাখার ড্রামে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশ বাল্কহেড তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের আটক করে। তবে ঘটনার পর বাল্কহেডের চালক পালিয়ে গেছে। বাল্কহেডটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার দশআনি এলাকার মো. নরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি থানা (ওসি) মোল্লা সোয়েব আলী বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক আলামিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছে। আটক ৩ শ্রমিককে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো.জামাল উদ্দিন জানান, বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৩ আসামীকে আটক করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আসামীদের জামিন শুনানী শেষে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। উল্লেখ- শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইলের চর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের বাল্কহেডটি চাঁদপুর থেকে বালু আনতে পদ্মার শাখা নদী দিয়ে মূল নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে অসাবধানতাবশত বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফার (১৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। গত রবিবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী নৌযান দুর্ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি নদী থেকে টেনে তোলা হয়। এ ঘটনায় এখোন নিখোজঁ পর্যন্ত সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) ও লাশ উদ্ধার হওয়া শিফার খালাতো ভাই রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩৫) নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের সন্ধান না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন স্বজনেরা। জীবিত না পেলেও অন্তত তাঁদের মুখ শেষবারের মতো দেখতে চান তাঁরা।