মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পদ্মা পারের মহেশপুর ঘাট। এ ঘাট দিয়ে মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও কুমিল্লা, চাদঁপুর ও শরিয়তপুর জেলার মানুষ যাতায়াত করে। সেতুর অভাবে প্রতিনিয়ত দুভোর্গ নিয়ে পার হতে হচ্ছে ৪ জেলার মানুষদের।
মহেশপুর ঘাটে মানুষ পারাপারের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা)। এসব ট্রলারে মানুষ দুর্গম পদ্মা মেঘনার চর থেকে প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জের মূল ভূখণ্ড হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
মুন্সীগঞ্জের মহেশপুর গুদারা ঘাটের পূর্ব দক্ষিণ দিকে রয়েছে চাদঁপুর ও কুমিল্লা জেলা। দক্ষিণ-পশ্চিমে শরিয়তপুর জেলা। গুদারা ঘাটের একটু পূর্ব পাশেই পদ্মা মেঘনার সংযোগস্থল কালিরচর গ্রাম। তাই এই দুই নদীর মোহনাসহ পাশের চরাঞ্চলের মানুষদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হলো এই মহেশপুর খেয়াঘাট।
গত দুই যুগ ধরে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে ভাঙন চলছে। ভাঙনের সঙ্গে পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে চরও। এসব চরে অনেকেই বসতি গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া শরিয়তপুর, কুমিল্লা ও চাদঁপুর জেলার পদ্মা মেঘনা নদীর ভাঙনের কারণে পদ্মা মেঘনার চরে বসবাস করছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে একদিকে যেমন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল, পাঁচগাও ইউনিয়ন, মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার, শিলই ইউনিয়ন ও লৌহজং উপজেলার প্রায় অনেক জায়গা নদীতে বিলীন হওয়া অঞ্চলের মানুষ এখন পদ্মার চরে বসবাস করছেন। শরীয়তপুর জেলার নওপাড়া, কাঁচিকাটা, চরআত্রা, কুন্ডেরচর, ঘড়িশার ইউনিয়ন এবং জাজিরার ওগলারচর ও চাঁদপুরের ২ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মহেশপুর ঘাট ছাড়াও শরীয়তপুরের ৫ ইউনিয়ন ও মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা পারাপার হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের দিঘিরপাড়, হাসাইল গুদারাঘাট হয়ে। শরীয়তপুরের অনেকেই দৈনন্দিন কাজ ও ঢাকাসহ সারাদেশে যোগাযোগের কাজে তারা প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জ হয়ে যাতায়াত করেন। এসব এলাকার লোকজন দিনে নৌকায় যাতায়াত করলেও সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ব্রিজ ও রাস্তার সমস্যার কারণে ছেলে-মেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করতে পারছে না। এ ছাড়া কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতেও পোহাতে হয় অনেক ভোগান্তি। ঝুঁকির পাশাপাশি নৌকা পারাপারে অর্থ ও সময় বেশি লাগছে। নৌকায় মাঝেমধ্যে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। দুর্ভোগ অবসানে পদ্মা চরের সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের মূল ভূখণ্ডে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মহেশপুর ঘাটের অটো চালক মো. ইয়াসিন বলেন, মুন্সীগঞ্জ চরাঞ্চল ছাড়াও চাঁদপুর, কুমিল্লা, শরীয়তপুর জেলার লোকজন মহেশপুর ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার লোক মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর হয়ে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেন। যদি এখানে একটি সেতু হতো তাহলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমে যেত।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ট্রলার চালক বাবুল মিজি বলেন, আমি মুন্সীগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় ট্রলার চালাই। আমি ছাড়াও আরও ৫ জন এ লাইনে ট্রলার চালান। প্রতিদিন অনেক মানুষ ট্রলারে পার হয়। শীত মৌসুমে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে ঝর বন্যা জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি নিয়েই আমাদের ট্রলার চালাতে হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মহেশপুর গুদারা ঘাটের পাশের নদীটি পদ্মার একটি শাখা খাল। আমরা এ স্থানে অনেক আগেই সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই এ শাখা নদীর দুপারের কোনো না কোনো অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আমরা গত বর্ষায়ও এ শাখা নদীর ভাঙন স্থানে বালুর বস্তা ফেলেছি। যদি এ স্থানে সেতু নির্মাণ হতো তাহলে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হতো।