হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাাবিত, হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার বিকেল থেকে এই উপজেলায় বইছে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিষ চাকমা জানান, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ইতোমধ্যেই ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ১১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বৈরি আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে শনিবার বিকেল থেকে সারাদেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ১০ নম্বর ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেওয়া হয়েছে।

হাতিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে শনিবার রাত থেকে হাতিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে দমকা হাওয়া বইছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় শনিবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে।’
‘আজ সকালে থেকে হাতিয়ায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮ নটিকেল মাইল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার নৌযান নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জোয়ার শুরু। ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

রেমালের প্রভাবে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর উল্যাহ জানান, বাতাসের গতিবেগ অনেক বেড়ে গেছে। তার ইউনিয়নে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। জোয়ারের উচ্চতা বেশি হলে বেড়বাঁধ ভেঙে ১২হাজার লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে ৪,৫,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাধেঁর বাইরে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে যাচ্ছে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে কোনো কাজ করে না। ৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য তাদের কাছে একাধিক বার অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি।’

সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, তার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজচরা গ্রামে পানি প্রবেশ করে ৫০০ লোক গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন বলেন, ৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। নিঝুম দ্বীপ পুরোটাই তলিয়ে গেছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। অতি দ্রুত নিঝুমদ্বীপকে বেড়িবাধেঁর আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এ ছাড়াও হরনী, চানন্দী, সুখচর, চর ইশ্বর, নলচিরা, চর কিং, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, জাহাজমারা, নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া পৌরসভা এলাকা ছাড়াও বিচ্ছিন্ন চর ডালচর ও ঘাসিয়ারচর এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বৃষিবিদ আবদুল বাছেত বলেন, ‘রেমালের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রোববার দুপুর পর্যন্ত বেড়িবাধেঁর বাইরে প্লাবিত হয়েছে। এতে শাকসবজি ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী জামিল আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘হাতিয়া মোট ১১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বাঁধের গোড়ায় পানি উঠেছে। এখন ভাটা চললেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানির প্রবাহ স্থিতি অবস্থায় রয়েছে। রাতে জোয়ারের সময় অতি উঁচু মাত্রায় জোয়ারের পানি প্রবাহের ঝুঁকি রয়েছে।’

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিষ চাকমা বলেন, ‘অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে নিঝুমদ্বীপ, নলচিরা, তমরদ্দি, চরইশ্বর ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও বাকি বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল প্রাবিত হয়েছে। হাতিয়াবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে যাচ্ছে না।’

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ১০২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’