৩৫ বছর ধরে বানের জল ভাসিয়ে নিচ্ছে বৃদ্ধা আখলেমার ঘরবাড়ি!

পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বগুড়ার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশ ইউনিয়নের ঘুঘুমারী চরে বসবাস করেন বৃদ্ধা আখলেমা খাতুন। প্রমত্তা যমুনায় উজানের ঢল থেকে সৃষ্টি হওয়া বানের পানিতে তার টিনের কাঁচাবাড়ি ডুবেছে প্রতিবছরই; ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।
প্রতিবারের মতো এবারও যমুনা নদীতে উজানের ঢলে আসা বানের জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বৃদ্ধ আখলেমা। পরিবারসহ ঘুঘুমারী চরে দুদিন পানবন্দি থাকার পর অবশেষে আশ্রয় নেন বাঁধে। সঙ্গে নৌকায় করে নিয়ে আসেন গৃহপালিত দুই পশুকেও।
আখলেমা বলেন, ‘বাড়িতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদুৎ নেই। বন্যার পানির সঙ্গে সাপ ঘরে চলে আসছে। এগুলো দেখার বা সমাধান করার কেউ নেই। তিন দিন হয়ে গেলেও সরকার বা কোনো সংস্থা সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়ায়নি।’

শনিবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাতে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ডুবে গেছে চরের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, আর তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত।

এ বছর গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) থেকে উজানের পানির ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় ২০ হাজার পরিবারের ৮৫ হাজার মানুষ।

যমুনার পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে নিচু গ্রামগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিন উপজেলার ১৩৫৬ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ৩৬টির বেশি স্কুলে পানি ওঠায় অনানুষ্ঠিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় এক হাজার একশ নলকূপ পানিতে ডুবে ব্যাহত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আলহাজ নাজমুল হক জানান, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার পানি শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে এসব উপজেলার চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে নিচু জায়গা ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পানি বাড়লেও যমুনা তীরের ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনও কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়নি। নদীর ৬টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইছামারা অংশ ভাঙনপ্রবণ। সেখানে নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মতলুবুর রহমান জানান, যমুনার পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দিতে ৫৬০ হেক্টর এবং সোনাতলা উপজেলায় ২৬১ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে পাট, ভুট্টা ও সবজি চাষ করা হয়েছিল।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চিহ্নিত করে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনাসহ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।