৩৬টি মিটার চুরির পর চিরকুটে লেখা ‘ফেরত পেতে ফোন করুন’!

নাটোরের গুরুদাসপুরে গভীর রাতে বৈদুতিক মিটার চুরি করে যাওয়ার সময় মিটারের পাশে পলিথিনে মুড়িয়ে রেখে যাওয়া হয় চিরকুট। সেই চিরকুটে লেখা ছিল ফোন নম্বর ও চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেতে ফোন করুন। চিরকুটে থাকা নম্বরে ফোন করলে চাওয়া হয় টাকা। বিকাশ ও নগদ নম্বরে টাকা দিলে মিটার কোথায় পাওয়া যাবে তার স্থান বলে দেওয়া হয়।

শুক্রবার (৫ জুলাই) ভোরে গুরুদাসপুর পৌর সদরের গারিষাপাড়া, গোপালের মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ৩৬টি বৈদুতিক মিটার চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গুরুদাসপুরের গারিষাপাড়া, গোপালের মোড়সহ কয়েকটি এলাকার চাতাল, মিল, কারখানা ও বাড়ির প্রায় ৩৬টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া মিটারের স্থানে চোর চক্রের সদস্যরা চিরকুট লিখে যায়। সেই চিরকুটে লেখা ফোন নম্বরে চুরি হওয়া মিটার ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা কল করলে তাদের কাছে দাবি করা হয় টাকা। বিকাশ ও নগদ নম্বরে টাকা পাঠালে চুরি হওয়া মিটার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

গুরুদাসপুর পৌর সদরের গারিষাপাড়া মহল্লার চাতাল ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান জানান, সকালে চাতালে এসে দেখি মিটার নেই। তবে মিটারের নিচে পলিথিনে মুড়িয়ে থাকা একটি চিরকুট দেখতে পান তিনি। চিরকুটের ভেতরে একটি কাগজে লেখা ছিলো, ‘চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেতে ফোন করুন’। নিচে একটি নম্বর দেওয়া ছিলো। নিজের মোবাইল ফোন থেকে নম্বরটিতে কল দিলে বন্ধ দেখায়। তিনি আরও জানান, প্রতিবেশীরা তাকে বলেছেন দুপুরের পরে কল দিতে। কারণ তারা সারারাত চুরি করে এখন ঘুমাচ্ছেন। মিটার চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, শুধু তার একার নয়, আশ পাশের এলাকা দিয়ে প্রায় ৩৬টি মিটার চুরি হয়েছে রাতে। এ ঘটনায় পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে খবর দিলে তারা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

মিটার চুরি যাওয়া আরও এক চাতাল মালিক রবিউল করিম জানান, ‘মিটার চুরির ঘটনা আজ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চাতাল ব্যবসায়ী, মিল কারখানা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মিটার চুরি করে বিকাশে ৪-৫ হাজার টাকা নিয়ে মিটার ফেরত দেয়। তার মিটারটি এর আগেও একবার চুরি হয়েছিলো। মিটারের নিচে রেখে যাওয়া নম্বরে কল দিলে বিকাশ নম্বর দেয়। সেই নম্বরে এর আগে ৪ হাজার টাকা পাঠিয়ে ছিলেন তিনি। তারপর চোরের দেওয়া তথ্যমতে, নদী তীরবর্তী স্থান থেকে মিটার সংগ্রহ করে ছিলেন তিনি। প্রশাসনিক ভাবেও এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে জিম্মি হয়ে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিতে হয়েছে তার।

এ বিষয়ে নাটোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ (গুরুদাসপুর জোনাল অফিস) এর ডিজিএম মো. মোমিনুর রহমান বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী গোপালের মোড় থেকে ১৩টি মিটার চুরি হয়েছে। তার বেশিও হতে পারে। বৃষ্টির কারণে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। চুরির পর প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। ক্ষতিগ্রস্ত সব গ্রাহককে থানা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।